Description
তাসনিয়া জাহান
৭ম শ্রেণী
জোরগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
গ্রীষ্মের দাবদাহের অনলে মাঠঘাট যখন ফেটে চৌচির ঠিক তার বিপরীতে এক দৈব সুখিনী হয়ে রাজমিস্ত্রী তানজিলের (৪০) ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় তাসনিয়া জাহান। বাবা মায়ের একমাত্র সবেধন নীলমনি হওয়ায় আনন্দের কোন কমতি ছিলো না তাসনিয়ার মা সাহিদা খাতুনের। ফুলকড়ির মত সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশু তাসনিয়াকে সারাক্ষণ কোলে রাখতেন তিনি। বাবার থেকে পাওয়া শৈশবের স্নেহ ও মায়ের মমতায় একটু একটু করে বড় হতে থাকে সকলের পরশমণি তাসনিয়া (৬)। তাসনিয়ার বাবা রাজমিস্ত্রী তানজিল ছিলেন চৌকস ও পরিশ্রমী, জীবিকা নির্বাহের প্রচেষ্টায় কোন ঘাটতি রাখতেন না, নিজের স্বল্প আয়ে স্ত্রী সাহিদা খাতুন ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বেশ সুখের সংসার গড়েছিলেন তিনি। এই সুখকে সমৃদ্ধ করতে রাজমিস্ত্রী তানজিল চিন্তা করলেন যদি তিনি রাজধানীতে কাজ করার সূযোগ পেয়ে যান তাহলে তার সংসারের সুখ শান্তি বৃদ্ধিকরণ হবে। তিনি স্ত্রী এবং একমাত্র মেয়ে তাসনিয়াকে নিয়ে আরও ভালো ভাবে বসবাস করতে পারবেন। লেখাপড়ার দিকে গভীর ঝোক থাকলেও তানজিল লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে নি। ছোট থেকেই দেখতেন অভাবের সংসারে নিভু নিভু আলো, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা সদা সংসারে লেগে থাকে। অতঃপর তানজিল এক প্রকার বাধ্য হয়ে দিনমজুরি শুরু করেছিলেন, সেই থেকে তানজিলের এই দুঃসাহসিক যাত্রা। অতঃপর স্ত্রী সাহিদা খাতুনের (২৯) সাথে পরামর্শ করে যান্ত্রিক শহর ঢাকায় একটি নির্মাণাধিন এগারো তলা ভবনের কাজে যোগদান করেন। পরিশ্রমী তানজিলের সততা এবং নিষ্ঠার কারণে সফলতা দ্রুত দুয়ারে আসতে শুরু করে, তিনি আরও বিল্ডিংয়ের কাজ পেতে থাকেন। এভাবে চলতে থাকে তানজিলের দিন এবং রাত। দিনের অগ্রভাগ কাটে পরিশ্রমে এবং শেষভাগ কাটে বিশ্রামে। সারাদিন কাজ শেষে স্ত্রী সাহিদাকে টাকা পাঠিয়ে একমাত্র মেয়ে তাসনিয়ার খোঁজ-খবর নিতে মোটেও দেরি করেন না তাসনিয়ার বাবা তানজিল। প্রখর রোদের তাপ, এক ফোটা বৃষ্টির জন্য জনজীবনে চলছে কাকুতিমিনতি, এই দুর্ভোগ এবং হাপিত্যেশের মাঝেও এগারো তলায় জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছে এক স্বপ্নবাজ যুবক। সেদিন শুন্যে ঝুলে এক হাতে দড়ি এবং অন্য হাতে কাজ করছিলেন রাজমিস্ত্রী তানজিল, সেটাই আজ তার এবং পরিবারের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পেরে সুউচ্চ দীর্ঘ এগারো তলা থেকে নিচে পড়ে যায় তানজিল। হঠাৎ আওয়াজ শুনে লোকজন বাইরে বেরিয়ে আসে, উৎসুক জনতার ভিড়ে তানজিলের দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় নীচে পড়ে থাকে। এরপর বাসিন্দারা তৎক্ষণাৎ তানজিলকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তানজিলের লাশ গ্রামে পৌছালে সাহিদা বেগম দিকহারা হয়ে প্রলাপ করতে থাকে, আর্তনাদে ভেঙ্গে পড়ে তাসনিয়ার মা, কি থেকে কি হয়ে গেল কিছুই উপলব্ধি করতে পারেন না তিনি, মৃত্যুর বাস্তবতা মেনে নিয়ে একমাত্র মেয়ে তাসনিয়াকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন সাহিদা বেগম। তানজিলের স্থাবর অস্থাবর বলতে বসতি জমি ছাড়া কিছুই নেই, যে কারনে স্বামীর মৃত্যুর পর একরকম বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ীতে ফিরে আসতে হয় সাহিদা বেগমের। তাসনিয়ার নানার স্বল্প আয়ের সংসারে আগে থেকেই সংকটের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকায় তার দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে সাহিদা বেগম সেলাই মেশিনের কাজ করে স্বল্প পরিসরে আয় রোজগার করছেন, যা দিয়ে টানাপোড়েন কিছুটা কমলেও সংসার চালাতে এখনও তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই সংকটাবস্থায় ছোট্ট তাসনিয়াকে আমরা পরোপকারী পরিবার (এপিপি) স্পন্সরের আওতায় এনে সাহিদা খাতুনকে বিশ্বাস যোগান দেওয়ার প্রচেষ্টা চলমান রেখেছি। এই প্রচেষ্টার অংশীদার হয়ে আপনিও পারেন তাদের কালোমেঘ দূর করে শিশুটির মুখে একফালি হাসি ফোটাতে। বড় হয়ে চাকুরী করার স্বপ্ন দেখে শিশু তাসনিয়া, হয়তো-বা আপনার সাহায্যে অনেক বড় ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, অথবা দেশবরেণ্য উদ্দোক্তা হবে একদিন, সেদিন তার স্বচ্ছলতার পশরায় আবারও কতক এতিম নতুন করে হাসবে এবং বাঁচতে শিখবে।
Reviews
There are no reviews yet.